কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া: কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিকার

কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। যখন কিডনি বিকল হয়ে যায় বা কাজ করা বন্ধ করে, তখন এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কিডনি বিকল হওয়ার প্রক্রিয়াকে কিডনি ফেইলিউর বা কিডনি বিকল বলা হয়। এই প্রবন্ধে আমরা কিডনি বিকল হওয়ার কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিকারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া

কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া

কিডনি বিকল হওয়ার কারণ

কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease – CKD)

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং কিডনির প্রদাহজনিত রোগগুলো এর প্রধান কারণ। CKD-এর চূড়ান্ত পর্যায়ে কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হতে পারে।

২. ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে কিডনি তার কাজ ঠিকভাবে করতে পারে না। এটি কিডনি বিকল হওয়ার একটি প্রধান কারণ।

৩. উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিডনির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে। এর ফলে ক্রমাগত কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কিডনি বিকল হতে পারে।

৪. কিডনি সংক্রমণ বা প্রদাহ

কিডনির সংক্রমণ বা প্রদাহও কিডনি বিকলের কারণ হতে পারে। কিছু প্রদাহজনিত কিডনি রোগ যেমন গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস কিডনির কার্যক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৫. মাদক বা বিষাক্ত পদার্থ

অনেক ধরনের মাদক, যেমন কিছু ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যালকোহল, এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এসব মাদক গ্রহণ কিডনির বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

 

কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া

 

কিডনি বিকলের লক্ষণ

কিডনি বিকল হওয়ার লক্ষণগুলো বিভিন্ন হতে পারে এবং তা বিকলের ধরণ ও কারণের ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

১. অতিরিক্ত ক্লান্তি

কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমা হতে থাকে, যা ক্লান্তির সৃষ্টি করে। এছাড়া কিডনি বিকলের কারণে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা আরও ক্লান্তির কারণ হতে পারে।

২. পা এবং মুখ ফুলে যাওয়া

কিডনি শরীরের অতিরিক্ত পানি এবং লবণ ঠিকমতো বের করতে না পারলে পা, হাত, এবং মুখ ফুলে যেতে পারে।

৩. প্রস্রাবের পরিমাণ ও ধরণ পরিবর্তন

কিডনি বিকল হওয়ার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে অথবা রঙ এবং গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে। রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজনও কিডনি সমস্যার একটি ইঙ্গিত হতে পারে।

৪. বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা

কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে বমি বমি ভাব এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।

৫. শ্বাসকষ্ট

কিডনি বিকল হলে ফুসফুসে অতিরিক্ত তরল জমা হতে পারে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। এছাড়া কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।

 

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কিডনি বিকল প্রতিরোধ ও প্রতিকার

কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি সঠিক সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিডনি বিকলের প্রতিকার সাধারণত এর কারণের ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ প্রতিরোধমূলক ও প্রতিকারের পদ্ধতি হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন কম লবণ, কম চর্বি, এবং শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। প্রচুর পানি পান করাও কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগগুলো কিডনি বিকলের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. মাদক ও অ্যালকোহল পরিহার করা

অতিরিক্ত মাদক ও অ্যালকোহল গ্রহণ কিডনির ক্ষতি করতে পারে। তাই এ ধরনের পদার্থের ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।

৪. পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ

নিয়মিত ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা কিডনি বিকল প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

৫. চিকিৎসা

যদি কিডনি বিকল হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে ডায়ালাইসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপন প্রধান। ডায়ালাইসিস হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করা হয়। কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বিকল কিডনিকে নতুন কিডনি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

 

কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া

 

কিডনি বিকল একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা দ্রুত নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা যেমন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই সঠিক সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখা কিডনি বিকল প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং পরিমিত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কিডনির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment