নামকরণ, প্রথম কোষের সৃষ্টি, কোষের বৈশিষ্ট্যসমূহ আজকের আলোচনার বিষয়। “নামকরণ, প্রথম কোষের সৃষ্টি, কোষের বৈশিষ্ট্যসমূহ [ formation of first cells, characteristics of cells ]” ক্লাসটি “এইচএসসি (একাদশ দ্বাদশ) [ HSC (11-12) ]” শ্রেণীর “জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র [ Biology First Paper ]” সাবজেক্ট এর “অধ্যায় ১ঃ কোষ ও এর গঠন [ Chapter 1: Cell and its structure ]” অধ্যায়ের পাঠ। এইচএসসি (একাদশ দ্বাদশ) [ HSC (11-12) ]” শ্রেণীর “জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র [ Biology First Paper ]” সাবজেক্ট এর আরও ক্লাস পেতে যুক্ত থাকুন “মেডিকেল এডুকেশন, স্বাস্থ্য শিক্ষা গুরুকুল [ GOLN ]” এর সাথে।
নামকরণ, প্রথম কোষের সৃষ্টি, কোষের বৈশিষ্ট্যসমূহ
সকল কোষেই কিছু সাধারণ উপাদান বা অংশ থাকে, যেমন – কোষকেন্দ্র (নিউক্লিয়াস), কোষপঙ্ক (সাইটোপ্লাজম) এবং কোষঝিল্লি বা কোষপ্রাচীর। কিছু কিছু ব্যতিক্রমী কোষের ক্ষেত্রে কোনও কোনও অংশ অনুপস্থিত থাকতে পারে। যেমন লোহিত রক্তকণিকা কোষে কোষকেন্দ্র থাকে না। কিন্তু আদর্শ কোষ বলে আসলে কিছু নেই। মানুষের দেহ কয়েক শত ধরনের কোষ নিয়ে গঠিত। যেমন স্নায়ু কোষ, রক্তকণিকা কোষ, ত্বকের কোষ বা যকৃৎ কোষ। আদর্শ কোষ বলতে এমন একটি প্রতীকী ও কাল্পনিক কোষকে বোঝায় যাতে অধিকাংশ কোষে প্রাপ্ত সমস্ত উপাদানগুলি বিদ্যমান থাকে।
যেমন একটি তথাকথিত আদর্শ প্রাণীকোষে চারটি উপাদান থাকে: কোষকেন্দ্র, কোষঝিল্লি বা কোষপর্দা, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং কোষপঙ্ক (সাইটোপ্লাজম)। অন্যদিকে একটি আদর্শ উদ্ভিদকোষের উপাদানগুলি হল নিউক্লিয়াস, কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লি বা কোষপর্দা, কোষগহ্বর, সাইটোপ্লাজম, মাইটোকন্ড্রিয়া ও হরিৎ কণিকা (ক্লোরোপ্লাস্ট)।
কোষ যে সজীব, প্রাণবাহী মাতৃপদার্থ নিয়ে গঠিত, তাকে প্রাণপঙ্ক (প্রোটোপ্লাজম) বলে। এটি খানিকটা পিচ্ছিল থকথকে পদার্থের মত, অর্থাৎ কঠিন ও তরলের মাঝামাঝি কিছু। প্রোটোপ্লাজমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম। কোষপর্দার ভেতরে কিন্তু কোষকেন্দ্রের বাইরে অবস্থিত প্রাণপঙ্ক অংশটিকে কোষপঙ্ক (সাইটোপ্লাজম) বলে। কোষপঙ্কের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের জটিল অতিক্ষুদ্র সব কাঠামো আছে, যেগুলি সাধারণ আলোকীয় আণুবীক্ষণিক যন্ত্রে ধরা পড়ে না, কিন্তু বৈদ্যুতিক আণুবীক্ষণিক যন্ত্রে এগুলির খুঁটিনাটি বিশদ আকারে দেখতে পাওয়া যায়। এই অতিক্ষুদ্র কাঠামোগুলিকে কোষীয় অঙ্গাণু বলে।
কোষের সবচেয়ে বড় অঙ্গাণুটিকে কোষকেন্দ্র বলে। স্বল্পসংখ্যক কিছু ব্যতিক্রমী কোষ বাদে সমস্ত কোষে কোষকেন্দ্র থাকে। যেসব কোষে কোষকেন্দ্র থাকে না, সেগুলি সাধারণত মৃত হয়, যেমন উদ্ভিদের জাইলেম কলার কোষসমূহ। অথবা এগুলি বেশিদিন বাঁচে না, যেমন লোহিত রক্তকণিকা। কোষকেন্দ্র কোষের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। কোষকেন্দ্রের ভেতরে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক অ্যাসিড) নামক রাসায়নিক পদার্থের অণু নিয়ে গঠিত সুতার মত দেখতে কিছু উপাদান থাকে, যাদেরকে বর্ণসূত্র বা বংশসূত্র (ক্রোমোজোম]]) বলে।
মানুষের কোষের কোষকেন্দ্রে এরকম ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি বংশসূত্র থাকে। প্রতিটি বংশসূত্রে একটি করে ডিএনএ অণুর দীর্ঘ শৃঙ্খল থাকে, যে শৃঙ্খলটি স্থান সঙ্কুলান করার জন্য ভাঁজ হয়ে ও হিস্টোন নামের কিছু প্রোটিনকে ঘিরে সর্পিলাকারে পেঁচিয়ে বিন্যস্ত হয়ে থাকে। ডিএনএ অণুর একেকটি অংশ একেকটি বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য বহন করে, যে অংশগুলিকে বংশাণু (জিন) বলে।
বংশাণুগুলি কোষের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ কোন্ ধরনের দেহসার বা প্রোটিন তৈরি বা সংশ্লেষণ করবে, তা নির্ধারণ করে। বংশাণুবাহী ডিএনএগুলি কোষকেন্দ্রে অবস্থান করে, কিন্তু প্রোটিন উৎপাদন করার নির্দেশগুলি কোষকেন্দ্রের বাইরে কোষপঙ্কতে পরিবাহিত হয় এবং রাইবোজোম নামক নামের ক্ষুদ্র কিছু কাঠামোতে প্রোটিন উৎপাদিত বা সংশ্লেষিত হয়।
কোষের ভেতরে প্রাপ্ত প্রোটিনগুলির মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ধরনের প্রোটিন হল উৎসেচক (এনজাইম)। কোষপঙ্কতে যে রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি ঘটে, উৎসেচকগুলি সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সব কোষের পৃষ্ঠতল একটি অত্যন্ত পাতলা পর্দার ন্যায় কোষঝিল্লি বা কোষপর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এটি বহিঃস্থ পরিবেশ থেকে কোষের কোষপঙ্ককে পৃথক করে রাখে। তবে কোষঝিল্লি সম্পূর্ণ অভেদ্য একটি প্রতিবন্ধক নয়, বরং আংশিকভাবে ভেদ্য। কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ কোষঝিল্লির ভেতর দিয়ে কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, আবার কতগুলি রাসায়নিক পদার্থ কোষ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কোষঝিল্লি এই প্রবেশ ও বহির্গমন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বলা হয় কোষপর্দা শুধু আংশিকভাবে ভেদ্যই নয়, বরং নৈর্বাচনিকভাবে বা বিভেদকভাবে ভেদ্য।

কোষের ভেতরে অন্যান্য আরও ঝিল্লি জাতীয় পদার্থ আছে। কোষপঙ্কর প্রায় সর্বত্র জুড়ে কিছু ঝিল্লির ন্যায় জালিকা উপস্থিত থাকে, যাদেরকে অন্তঃকোষীয় জালক (এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম) বলে। কিছু কিছু অন্তঃকোষীয় জালক খুবই ক্ষুদ্র কিছু দানাদার উপাদান দিয়ে আবৃত থাকে, যাদেরকে রাইবোজোম বলে। রাইবোজোম নামের অঙ্গাণুগুলিতেই প্রোটিনগুলি সংযোজিত বা সংশ্লেষিত হয়। কোষের ভেতরে এরকম হাজার হাজার রাইবোজোম থাকে।
আরেকটি অঙ্গাণু যা প্রায় সব কোষের কোষপঙ্কতে দেখতে পাওয়া যায়, তা হল মাইটোকন্ড্রিয়ন (বহুবচনে মাইটোকন্ড্রিয়া)। যেসব কোষের কর্মকাণ্ডে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়, যেমন পেশী কোষ বা স্নায়ুকোষ, সেগুলিতে বহুসংখ্যক মাইটোকন্ড্রিয়ন থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে কোষীয় শ্বসন প্রক্রিয়ার কিছু বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, যার ফলে কোষের জন্য ব্যবহারোপযোগী শক্তি নির্গত হয়।
উদ্ভিদকোষের ক্ষেত্রে উপরের অঙ্গাণুগুলি ছাড়াও আরও তিনটি প্রধান উপাদান থাকে। এগুলি হল কোষপ্রাচীর, কোষগহ্বর ও হরিৎ কণিকা (ক্লোরোপ্লাস্ট)।
কোষপ্রাচীর হল প্রাণহীন পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি স্তর যা উদ্ভিদকোষের কোষঝিল্লির বাইরে অবস্থান করে। এটি মূলত সেলুলোজ নামের এক ধরনের শর্করা দিয়ে গঠিত হয়। সেলুলোজ একটি শক্ত উপাদান নিয়ে গঠিত যা কোষকে তার আকৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে উদ্ভিদকোষগুলি মোটামুটি একই আকৃতির হয়। অন্যদিকে প্রাণীকোষে কোনও কোষপ্রাচীর নেই বলে এদের আকৃতিগুলিও পরিবর্তনশীল হয়।
প্রায়শই উদ্ভিদকোষগুলির অভ্যন্তরে কেন্দ্রস্থলে ঝিল্লি দ্বারা আবৃত একটি বৃহৎ গহ্বরের ন্যায় এলাকা থাকে, যাকে কোষগহ্বর (ভ্যাকুওল) বলে। এটি শূন্য নয়, বরং কোষরস নামের এক ধরনের জলীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে, যা দ্রবীভূত চিনি, খনিজ আধান ও অন্যান্য দ্রাব্যের একটি ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। প্রাণীকোষে কোষগহ্বর থাকলেও সেগুলি ক্ষুদ্র আকারের ও ক্ষণস্থায়ী হয়।
উদ্ভিদের সবুজ অংশে, বিশেষ করে পাতায়, আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু থাকে, যার নাম হরিৎ কণিকা (ক্লোরোপ্লাস্ট)। হরিৎ কণিকাগুলি সূর্যের আলো শোষণ করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াতে খাদ্য উৎপাদন করে। হরিৎ কণিকাগুলিতে এক ধরনের সবুজ রঙের রঞ্জক পদার্থ থাকে, যাদেরকে ক্লোরোফিল বলে।
কোষঝিল্লির রাসায়নিক উপাদান ও কোষঝিল্লির বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত :
আরও দেখুনঃ