আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় Defiron ডেফিরন ওষুধের যাবতীয় তথ্য। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এরকম বিভিন্ন ওষুধের তথ্য আপনাদের কাছে পৌছে দিতে আমাদের এই আয়োজন।
Defiron ডেফিরন ওষুধের যাবতীয় তথ্য
উপাদানঃ
ডেফিরন” ইঞ্জেকশন: প্রতি মি.লি. ইঞ্জেকশনে আছে আয়রণ সুক্রোজ ইঞ্জেকশন ইউএসপি যা ২০ মি.গ্রা. এলিমেন্টাল আয়রণ সমতুল্য ।
নির্দেশনা:
ডেফিরন* আয়রণের অভাবজনিত নিম্নলিখিত নির্দেশনায় ব্যবহৃত হয়- যখন ক্লিনিক্যালি দ্রুত আয়রণ সরবরাহের প্রয়োজন হয় । যে সমস্ত রোগীদের মুখে সেবনযোগ্য আয়রণ সহ্য হয় না । প্রকট অস্ত্রের প্রদাহজনিত রোগে যেখানে মুখে সেবনযোগ্য আয়রণ অকার্যকর।
নন-ডায়ালাইসিস নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃক্ক রোগে আক্রান্ত রোগী যারা ইরাইথ্রোপোয়েটিন গ্রহণ করে। নন-ডায়ালাইসিস নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃত্ত রোগে আক্রান্ত রোগী যারা ইরাইথ্রোপোয়েটিন গ্রহণ করে না। হিমোডায়ালাইসিস নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃত্ত রোগে আক্রান্ত রোগী যারা ইরাইথ্রোপোয়েটিন গ্রহণ করে।
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃক্ক রোগে আক্রান্ত রোগী যারা ইরাইথ্রোপোয়েটিন গ্রহণ করে। এছাড়া ইহা সার্জারীর রোগী, রক্তদানকারী এবং প্রসব পরবর্তী রোগী, যারা আয়রণের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রেও নির্দেশিত।
মাত্রা ও সেবন বিধিঃ
প্রয়োগ বিধি: ডেফিন শিরাপথে ফোঁটায় ফোঁটায় ধীরগতিতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথ বা ডায়ালাইজার-এর ভেনাস লিম্ব এ সরাসরি সঞ্চার করতে হবে এবং ইহা সরাসরি পেশী অভ্যন্তরে সঞ্চারণ করা যাবে না এবং রোগীর আয়রণ ঘাটতি হিসাব করা সাপেক্ষে, নির্ধারিত মাত্রা একটি ইনফিউসনে দেয়া যায়। প্রথম ব্যবহারের পূর্বে একটি পরীক্ষামূলক মাত্ৰা ব্যবহার করা উচিত।
ওষুধ প্রয়োগের সময় যদি কোন এলার্জিক বিক্রিয়া বা অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়, তবে অনতিবিলম্বে এর প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। শিরাপথে ইঞ্জেকশন: ডেফিরন” ধীর গতিতে শিরাপথে প্রতি মিনিটে ১ মি.লি. হারে (২০ মি.গ্রা.) ২ থেকে ৫ মিনিট সময়ে দেয়া যাবে।
প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০ মি.লি. ডেফিরন’ (২০০ মি.গ্রা. আয়রণ) সঞ্চারিত করা যাবে। প্রথম ব্যবহারের পূর্বে পরীক্ষামূলক মাত্ৰা হিসেবে পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে এবং শিশু যারা ১৪ কেজি ওজনের উর্দ্ধে তাদের ক্ষেত্রে ১ মি.লি. ডেফিরন এবং যে সকল শিশুর ওজন ১৪ কেজির নিচে তাদের ক্ষেত্রে ১.৫ মি.গ্রা. আয়রণ/কেজি, ১-২৬ মিনিট সময়ে সঞ্চারণ করা উচিত।
যদি ১৫ মিনিট অপেক্ষমান সময়ে কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা না যায় তবে বাকী অংশ পূর্বে উলেখিত মাত্রায় সঞ্চালন করতে হবে। প্রতিবার প্রয়োগের পর রোগীর বাহু প্রসারিত রাখা উচিত।
ইনফিউশন: নিম্ন রক্তচাপ জনিত সমস্যা এবং ভুলভাবে শিরাপথে প্রয়োগের সম্ভাবনা কমানোর জন্য ডেফিরন * ফোঁটায় ফোঁটায় ইনফিউশনে প্রয়োগ করা উচিত।
সেক্ষেত্রে ১ মি.লি. ডেফিরন (২০ মি.গ্রা. আয়রণ) সর্বোচ্চ ২০ মি.লি. ০.৯% ডবিউ/ভি সোডিয়াম ক্লোরাইড [৫ মি.লি. (১০০ মি.গ্রা. আয়রণ) সর্বোচ্চ ০.৯% ডবিউ/ভি সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে ২৫ মি.লি. (৫০০ মি.গ্রা. আয়রণ ৫০০ মি.লি. ০.৯% ডবিউ/ডি সোডিয়াম ক্লোরাইড] সাথে দ্রবীভূত করতে হবে।
সঞ্চারণের পূর্ব মুহুর্তে অবশ্যই দ্রবীভূত করতে হবে এবং বর্ণিত উপায়ে প্রয়োগ করতে হবে- ১০০ মি.গ্রা. আয়রণ কমপক্ষে ১৫ মিনিটে, ২০০ মি.গ্ৰা. আয়রণ কমপক্ষে ৩০ মিনিটে, ৪০০ মি.গ্রা. আয়রণ কমপক্ষে ১.৫ ঘন্টাব্যাপ এবং ৫০০ মি.গ্রা. আয়রণ কমপক্ষে ৩.৫ ঘন্টাব্যাপী প্রয়োগ করতে হবে।
নতুন প্রাপ্ত বয়স্ক রোগী এবং শিশু যাদের ওজন ১৪ কেজির বেশি তাদের ক্ষেত্রে প্রথম ২০ মি.গ্রা. আয়রণ এবং শিশু যাদের ওজন ১৪ কেজির নিচে তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক মাত্রায় অর্ধেক (১.৫ মি.গ্রা./কেজি) পরীক্ষামূলক মাত্রা হিসেবে প্রয়োগ করা উচতি। যদি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়, বাকী অংশ পূর্বোলেখিত গতিতে সঞ্চালন করতে হবে।
ডায়ালাইজারের ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন : ডেফিরন ডায়ালাইজারের ভেনাস লিম্ব-এ শিরাপথে ইঞ্জেকশনের মত একই শর্তে সরাসরি প্রয়োগ করা যায়।
হিমোডায়ালাইসিস নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কের রোগে আক্রান্ত রোগী: ডেফিরন দ্রবীভূত না করে ১০০ মি.গ্রা. ধীর গতিতে শিরাপথে সরাসরি ইঞ্জেকশন হিসেবে ২ থেকে ৫ মিনিট অথবা ইনফিউশন আকারে ১০০ মি.গ্রা., সর্বোচ্চ ১০০ মি.লি. ০.৯% ডবিউ/ভি সোডিয়াম ক্লোরাইড এর মধ্যে মিশ্রিত করে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় ধরে প্রতি ডায়ালাইসিস-এর সময় সর্বমোট ১০০০ মি.গ্রা. মাত্রায় প্রয়োগ করা যায় ।
ডায়ালাইসিস অনির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কের রোগে আক্রান্ত রোগী: ডেফিন” ২০০ মি.গ্রা. শিরাপথে ধীরগতিতে ইঞ্জেকশন হিসেবে ২ থেকে ৫ মিনিট সময় নিয়ে ৫ বারে সর্বমোট ১০০০ মি.গ্রা. ১৪ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কের রোগে আক্রান্ত রোগী: ডেফিরন* সর্বমোট ১০০০ মি.গ্রা. ৩টি বিভক্ত মাত্রায় ইনফিউশন হিসেবে ২৮ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে: ৩০০ মি.গ্রা.
এর ২টি ইনফিউশন (১.৫ ঘন্টার মধ্যে) ১৪ দিনের মধ্যে এবং ৪০০ মি.গ্রা. এর ইনফিউশন ২.৫ ঘন্টাব্যাপী ১৪ দিন পরে দিতে হবে। ডেফিরন’-এর মাত্রা সর্বোচ্চ ২৫০ মি.লি. ০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড এর মধ্যে দ্রবিভূত করা উচতি।
বি:দ্র: আয়রণ সুক্রোজ অন্যান্য ওষুধ অথবা শিরাপথে ব্যবহারের জন্য পুষ্টি জাতীয় ইনফিউশনের সাথে মিশ্রণীয় নয়। শিরাপথে ব্যবহারের জন্য ওষুধ প্রয়োগের পূর্বে এর রং পরিবর্তন ও ভিতরে কোন ক্ষুদ্র কণিকা আছে কিনা তা ভালভাবে দেখে নেয়া উচিত ।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
আয়রণ সুক্রোজ নির্ভর অথবা অনির্ভর ক্ষতিকর বিক্রিয়া: নিম্ন রক্তচাপ, পেশী সংকোচন, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়া। এসবের কোন কোন উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী বৃক্কের রোগে আক্রান্ত রোগী অথবা ডায়ালাইসিস রোগী যারা শিরাপথে গ্রহণ করছে না তাদের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। সমস্ত শরীরে: মাথা ব্যথা, জ্বর, ব্যাথা, দূর্বলতা, দূর্ঘটনাজনিত আঘাত।
হৃদরোগ : সাধারণত নিম্ন রক্তচাপ, বুক ব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। পরিপাকতন্ত্র : বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, যকৃতে এনজাইম বেড়ে যাওয়া। কেন্দ্রীয় ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র: মাথা ঘুরানো।
অস্থি ও পেশীতন্ত্র: পেশী সংকোচন, অস্থি ও পেশীতে ব্যথা । শ্বসন তন্ত্র: কফ, নিউমোনিয়াজনিত শ্বাসকষ্ট। চর্ম ও চর্মগ্রন্থি: চুলকানি, প্রয়োগস্থানে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। অতি সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া: সতর্ক পরীক্ষায় পর্যবেক্ষণ করা গেছে, কতিপয় রোগী ক্ষীণ থেকে মাঝারী সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। যেমন- শব্দযুক্ত শ্বাস- প্রশ্বাস, শ্বাসকষ্ট, নিম্ন রক্তচাপ, র্যাশ অথবা চুলকানি ইত্যাদি।
এনাফাইল্যাকটিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর আশংকাও (এনফাইল্যাকটিক শক্, অবচেতনা, শ্বাসকষ্ট অথবা খিঁচুনি) দেখা দিতে পারে। এজন্য রোগীকে প্রথমে একটি পরীক্ষামূলক মাত্রায় ওষুধ সঞ্চারণ করা উচিত।
প্রতিনির্দেশনা:
রোগী যাদের দেহে আয়রণের পরিমাণ অতিরিক্ত, আয়রণ সুক্রোজ অথবা এর অসক্রিয় উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা, রক্তস্বল্পতা যা আয়রণের অভাবজনিত কারণে নয়। এছাড়াও ইহা এ্যাজমা, যকৃতের সমস্যা এবং কোন এনাফাইলাক্সিস- এর ইতিহাস রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিনির্দেশিত।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: আয়রণ সুক্রোজের সাথে অন্য ওষুধের কোন প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা তা এখনো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। তবে আয়রণ সুক্রোজ কোন সেব্য আয়রণ ওষুধের সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়। আয়রণ ইঞ্জেকশন দেয়ার পরবর্তীতে ৫ দিনের মধ্যে সেব্য আয়রণ ব্যবহার করা উচিত নয়।
সতর্কতা:
সাধারণঃ যেহেতু শরীর থেকে আয়রণ নিঃসরণ সীমিতভাবে হয় এবং অতিরিক্ত আয়রণ শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আয়রণের প্রয়োগের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যে সকল রোগী আয়রণ চিকিৎসা গ্রহণ করছে তাদের হিমাটোলাজিক ও হেমাটিনিক পরিমাপক (হিমোগে াবিন, হিমাটোক্রিট, ওসরাম ফেরিটিন এবং ট্রান্সফেরিন সম্পৃক্তি) মাত্রা নির্ণয় করে নেয়া উচিত।
রোগীর শরীরে আয়রণ অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে আয়রণের চিকিৎসা স্থগিত করতে হবে। শিরাপথে আয়রণের ব্যবহারের ফলে শরীরে ট্রান্সফেরিন সম্পৃক্তি এর মান দ্রুতই বেড়ে যায়। এজন্য রক্তরসে আয়রণের মান শিরাপথে প্রয়োগের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাওয়া যায়।
অতি সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া:
আয়রণ সুক্রোজের ফলে অতি সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দুর্লভ। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রার অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নিম্ন রক্তচাপ: শিরাপথে আয়রণ গ্রহন করছে এমন হিমোডায়ালাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিম্ন রক্তচাপ প্রায়ই লক্ষ্য করা গেছে। নিম্ন রক্তচাপ সম্ভবত আয়রণ সুক্রোজ প্রয়োগ ও তার মাত্রার উপর নির্ভরশীল। নির্দেশিকা অনুযায়ী সাবধানতা অবলম্বন করা উচতি।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার:
অন্তসত্ত্বা শ্রেণী- বি। গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ও নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা হয়নি। পরিষ্কারভাবে প্রয়োজন হলে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত। স্তন্যদানকারী: মাতৃদুগ্ধ থেকে এই ওষুধটি নিঃসরিত হয় কিনা জানা যায়নি। যেহেতু অনেক ওষুধই মাতৃ দুগ্ধ থেকে নিঃসরিত হয়। এই ওষুধটি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
শিশুদের ক্ষেত্রে: শিশুদের ক্ষেত্রে আয়রণ সুক্রোজ ব্যবহারে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে তরুণ এবং বয়ঃবৃদ্ধদের মাঝে নিরাপত্তাজনিত কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি এবং প্রকাশিত ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতাগুলোতেও তরুণ ও বৃদ্ধদের মাঝে এর প্রভাবের কোন পার্থক্য চিহ্নিত হয়নি। কিন্তু কিছু বৃদ্ধরোগীদের ক্ষেত্রে এর অধিক সংবেদনশীলতা ব্যখ্যা করা যায়নি।
সরবরাহ:
ডেফিরন’ ইঞ্জেকশন: প্রতিটি প্যাকেটে আছে এক অ্যাম্পুল আয়রণ সুক্রোজ ইঞ্জেকশন ইউএসপি (৫ মি.লি.), একটি জীবাণুমুক্ত ডিসপজেবল সিরিঞ্জ (৫ মি.লি.), একটি এলকোহল প্যাড এবং একটি ব্যান্ড এইড।
আরও দেখুনঃ